ফেসবুকে বন্ধ হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও নগ্নতার প্রচার
ইফতেখার রাজু, প্রতিক্ষণ ডট কম.
সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। বাংলাদেশেও ফেসবুক ব্যবহারকারিদের সংখ্যা কম নয়। আর এ দলে সব শ্রেণি পেশার লোকজন রয়েছে।দিনে অন্তত একটিবার নিজের ফেসবুক ওয়াল ও হোমপেজ ঘুরে না আসলে যেন অপূর্ণতা থেকে যায়।
মানুষের নিত্যদিনের কাজের সঙ্গী এ ফেসবুক। আর সেই শুরু থেকে ইচ্ছেমত ফেসবুক ব্যবহারের সুযোগও দিয়ে আসছিলেন জাকারবার্গ (ফেসবুকের আবিষ্কারক)।
তবে সে সুযোগে অনেক ব্যবহারকারি ফেসবুকে নগ্নতা ও জঙ্গিবাদের মত অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছিল। যার ফলে শান্তিপ্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারিদের ঝামেলায় পড়তে হয়।
এই যেমন ফেসবুক খোলা মাত্রই আপনার হোমপেজে চলে এলো নগ্ন কোনো ছবি। অথবা কোনও নিষিদ্ধ সংগঠন পরিচালিত বিশেষ কিছু গ্রুপ বা ফেসবুক পেইজ থেকে হিংসাত্মক মতাদর্শের প্রচার। অফিস বা বাসা কিংবা কোনো জনবহুল স্থানে এই নগ্ন ছবি নিয়ে বিব্রত হওয়ার ঘটনা কমবেশি অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। যদিও এ পরিস্থিতির জন্য আপনি দায়ি নন। আবার এর নিয়ন্ত্রণও নেই আপনার হাতে। অনেক বন্ধুবেশি ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধগোষ্ঠী এ ধরণের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে অথবা কোনও প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন তাদের নিজস্ব গ্রুপ বা পেইজ থেকে এ ধরণের কর্মকান্ড করে থাকে। আর নগ্নতার মাপকাঠি যেহেতু স্থান-কাল-পাত্র ভেদে নির্ভর করে, তাই এর আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও এর নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্হা নেয়নি।
কিন্তু, আগে কোনও নির্দিষ্ট ছবি বা লেখা বা কোনো আধেয়তে আপত্তি থাকলে একজন ব্যবহারকারিকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হত । সাধারণত ওই রিপোর্ট পেলে তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল ফেসবুক রিভিউ টিমের। তখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের রিভিউ টিম নীতিমালা বিরোধী কিছু পেলে তা বিবেচনায় এনে সংশ্লিষ্ট পোষ্ট মুছে দিত। তবে কোনও দেশের সরকারের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট আধেয় (কনটেন্ট) সম্পর্কে অভিযোগ আসলে সেটি বিবেচনার পদ্ধতিটি আলাদা।
কিন্তু সব ব্যবহারিকারি সমানভাবে সচেতন না হওয়াতে রিপোর্ট করার পদ্ধতিটি কাজে আসছিলনা। অন্যদিকে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিওতে ফেসবুকের পাতা ভরে যাচ্ছিল। আর ফেসবুককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আইসিস-এর মত জোঙ্গি গোষ্ঠী গুলি নিজেদের হিংসাত্মক ভাবধারার প্রচার চালিয়ে আসছে।
তাই এই সমস্যাটি আমলে নিয়ে এবার নড়েচড়ে বসেছে স্বয়ং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক পলিসি ম্যানেজমেন্ট প্রধান মনিকা বিকের্ট সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ফেসবুক সদস্যদের ব্যবহৃত ‘আপত্তিজনক’ কনটেন্ট মুছে দেয়ার আগের নীতিমালা বজায় থাকবে। পাশাপাশি ফেসবুকারদের কাছে এখন থেকে নীতিমালার ভাষাটি আরও সহজে ভাবে উপস্থাপন করা হবে।
আর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই বলে সতর্কবাণী করছে, এখন থেকে কোনও সন্ত্রাসী সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালানোর মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে ব্যবহার করতে পারবে না। ছড়ানো যাবে না কোনও বিদ্বেষমূলক মতবাদও।
প্রসংগত, সম্প্রতি শার্লে এবদোতে ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণের পরেই এমন সিদ্ধান্ত নেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
আর দ্রুতই ফেসবুকে নগ্ন ছবির পোস্ট নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এ নিয়ে নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত। এখন শুধু বাকি বাস্তবায়নের। এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ নগ্ন ছবি পোস্ট করতে দেবে না ফেসবুক। নগ্ন নারী বক্ষের ছবি বা ভিডিও তা-ও নিষিদ্ধ থাকবে। তবে মা শিশুকে স্তন্য পান করাচ্ছে, বিকৃত নয় কিন্তু ব্যঙ্গাত্মক ছবি এবং মন্তব্য (কমেন্টে) এমন ছবিতে আপত্তি নেই ফেসবুকের।
এর আগে ফেসবুকে নগ্নতা নিয়ে স্পষ্ট কোনো নীতিমালা ছিলনা। যার সুযোগ নিয়ে নগ্ন ছবি আর ভিডিও আপলোড়ের সুযোগ ছিল ফেসবুকে। এবার সেক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত নির্দেশনা নিয়ে এল ফেসবুক। যদিও নগ্ন নারী পুরুষের ঐতিহাসিক চিত্রকলা বা ভাষ্কর্য প্রদর্শনে এ বাধা থাকছে না। তবে কম্পিউটারে তৈরি নগ্ন ছবি বা ভিডিও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। এমনকি কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকছে প্রতিশোধমূলক নগ্ন ভিডিও (রিভেঞ্জ ভিডিও)-র ওপরও।
আর এতে করে আরও নিরাপদ এবং শক্ত হচ্ছে ফেসবুকের নিরাপত্তা। সব বয়সি মানুষের ব্যবহার উপযোগি করে ফেসবুককে গড়ে তুলতে এ নীতিমালা সহায়ক হবে। তাছাড়া ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যম সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িতদের লাগাম টেনে ধরাও সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
সূত্র: জি নিউজ
প্রতিক্ষণ/এডি/ই রা